বিশেষ প্রতিনিধি ::
জেলায় বছরে উৎপাদিত শুঁটকির আর্থিক মূল্য প্রায় ৩০০ কোটি টাকা। প্রাকৃতিক উপায়ে উৎপাদিত দেশীয় মাছের শুঁটকির রয়েছে দেশ-বিদেশে কদর।
সুনামগঞ্জের বিভিন্ন হাওরে শুঁটকি প্রস্তুতের ধুম পড়েছে। জেলার বিভিন্ন জলাশয় ও বিলে কার্তিক থেকে ফালগুন মাস পর্যন্ত ধরা পড়ে পুঁটি, টেংরা শোলসহ নানা প্রজাতির দেশীয় মাছ। কোনো ধরনের রাসায়নিক ছাড়া এসব মাছ শুকিয়ে উৎপাদন করা হচ্ছে শুঁটকি। উৎপাদিত শুঁটকি রাজধানী ঢাকাসহ রপ্তানি হচ্ছে ইউরোপ-মধ্যপ্রাচ্যে। জেলার ১২ উপজেলার বিভিন্ন হাওরের অস্থায়ীভাবে গড়ে উঠা শতাধিক মাচাং-এ (শুঁটকি পল্লী) উৎপাদন করা হয় এই শুঁটকি।
প্রাকৃতিক জলাশয়, বিল, ডোবা থেকে আহরণ করা মাছ এই মাচাংয়ে বিক্রি করেন জেলেরা। তাছাড়া বিভিন্ন গ্রামীণ বাজার থেকে মাছ কিনে নিয়ে আসেন শুঁটকি উৎপাদনকারী ব্যবসায়ীরা। পরবর্তীতে এই মাছ নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ায় কেটে মাচাংয়ে শুকিয়ে শুঁটকিতে রূপান্তর করা হয়।
জেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানাযায়, বর্ষা মওসুমের শেষ দিকে সুনামগঞ্জের বিভিন্ন হাওরে মাচা তৈরি করে শুঁটকি উৎপাদন করেন জেলেরা। জেলার ১২ উপজেলায় শতাধিক ‘শুঁটকি পল্লী’তে অন্তত ১০ থেকে ১২ প্রজাতির শুঁটকি উৎপাদন হয়ে থাকে। এবছর শুঁটকি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ২৫০০ মেট্রিক টন। যা ইতোমধ্যেই অর্জিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
জেলায় বছরে উৎপাদিত শুঁটকির আর্থিক মূল্য প্রায় ৩০০ কোটি টাকা। প্রাকৃতিক উপায়ে উৎপাদিত দেশীয় মাছের শুঁটকির রয়েছে দেশ-বিদেশে কদর। এখানকার শুঁটকির মান ও স্বাদ ভালো হওয়ায় বিদেশের বাজারেও প্রশংসিত হচ্ছে। দেশের চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানি হচ্ছে ইউরোপ-আমেরিকা, ভারত, মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে। শুঁটকি উৎপাদনের সাথে জেলার কয়েক হাজার জেলে যুক্ত রয়েছেন।
শান্তিগঞ্জ উপজেলার জয়কলস ইউনিয়নের নোয়াগাঁও গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল কবির গত ৪ বছর ধরে শুঁটকি পল্লীতে কাজ করেন। সিজনাল এই পেশায় কাজ করে পরিবারের ব্যয় নির্বাহ করেন এই জেলে। তার মতো এলাকার কয়েকটি শুঁটকি পল্লীতে অনেকেই কাজ করেন।
কবির বলেন, আমরা হাওর থেকে মাছ কিনে আনি। এই মাছগুলো মহিলাদের দিয়ে কাটাছেঁড়া করি। ধুয়ে লবণ দিয়ে রেখে রোদে শুকিয়ে শুঁটকি করি। পরে সেগুলো বাছাই করে বস্তাবন্দী করে রাখি। প্রতি মঙ্গলবার মহাজন কিশোরগঞ্জ নিয়ে এই শুঁটকি বিক্রি করেন। আমাদের শুঁটকিতে কোনো ক্যামিকেল ব্যবহার হয় না। তাই এর স্বাদ অন্যরকম। বাজারে প্রচুর চাহিদা রয়েছে এই শুঁটকির। এ বছরে আমাদের মাচা থেকে প্রায় ২ কোটি টাকার শুঁটকি বিক্রি করা হয়েছে।
দেখার হাওরের কাইক্কারপাড় গ্রামের শুঁটকি পল্লীর মালিক সুরুজ আলী বলেন, শুঁটকি ব্যবসার সাথে প্রায় ৩২ বছর ধরে রয়েছি। হাওরের শুঁটকির কদর দিন দিন বাড়ছে। দেশে যেমন এর চাহিদা রয়েছে তেমনি বিদেশেও এই শুঁটকির চাহিদা রয়েছে। প্রকারভেদে মণ প্রতি শুঁটকি ৩০ থেকে ৭০ হাজার টাকায় বিক্রি করা যায়। এই অঞ্চলের শুঁটকি ব্যবসার বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে। এক্ষেত্রে সরকারি সহযোগিতা প্রয়োজন। শুঁটকির গুণাগুণ রক্ষায় প্রশিক্ষণের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাজার তৈরিতে মৎস্য বিভাগ কাজ করছে বলে জানিয়ে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. শামসুল করিম বলেন, এখানকার শুঁটকি সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপায়ে তৈরি করা হয়। এই অঞ্চলের শুঁটকির আন্তর্জাতিক বাজার রয়েছে। এই শুঁটকি দেশের চাহিদা মিটিয়ে ইউরোপ ও মধ্যপাচ্যের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হয়। স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে শুঁটকি উৎপাদনে মৎস্য বিভাগ প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। শুঁটকিকে ব্র্যান্ডিং হিসেবে তুলে ধরতে মৎস্য বিভাগ কাজ করছে বলে জানান তিনি।
নিউজটি আপডেট করেছেন : SunamKantha
হাওরের শুঁটকি রপ্তানি হচ্ছে ইউরোপ-মধ্যপ্রাচ্যে
- আপলোড সময় : ০৯-০৩-২০২৫ ১১:৪১:৪৭ অপরাহ্ন
- আপডেট সময় : ০৯-০৩-২০২৫ ১১:৪৮:৩৬ অপরাহ্ন

কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ